ঝকঝকে শরতের আকাশ, হঠাৎ একটি তারা চলতে চলতে খসে পড়ে শুকতারাটির পাশ থেকে! অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অবন্তিকা!... ''আচ্ছা এই তারাটা কি আমি হতে পারি না? চলতে চলতে এক সময় টুপ করে খসে পড়ব আকাশ থেকে? তুমি কি তাহলে কাঁদবে অনিন্দ্য?....''
অনিন্দ্য অবন্তিকার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়! ''কি বলছো যা তা! তুমি খসে পড়বে কেন? তার চেয়ে ভালো আমরা দু জনে এক সাথে মেঘ হয়ে ভেসে রবো! পরীরা যেভাবে ডানা মেলে ভেসে ঊর্ধ্বাকাশে পাখির মত ভেসে থাকে ঠিক সে রকম! কেমন আইডিয়া বলো?''
অবন্তিকার চোখ জুড়ে স্বপ্নভর করে! ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখের মনি হঠাৎ বড় হয়ে যায়। '' সেই বরং ভালো! আমরা না হয় আকাশের বাসিন্দা হয়ে যাবো! পৃথিবীতে আমার একটুও ভালো লাগে না জানো! সেই যে তুমি চলে গেলে! আর এলে না! তারপর থেকে আমি একা! ভীষণ একা! তুমিও একটিবারের জন্য খোঁজ নিলে না! আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি তাও জানতে চাইলে না!.... তুমি কি করে এত স্বার্থপর হলে অনিন্দ্য?''
অনিন্দ্য, অবন্তিকার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় ,''কে বলেছে আমি চলে গেছি? এই তো আমি আছি! তুমি হাত বাড়ালেই ছুতে পারবে!''
''না তুমি নেই! তুমি স্রেফ আমার কল্পনা! বাস্তবে তুমি নেই। ডাক্তার আংকেল আমাকে বলেছেন আমি স্কিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছি! তাই মনে হচ্ছে তুমি আছো! কিন্তু বাস্তবে নেই! তুমি কেবলই আমার ভ্রম!''
অনিন্দ্য অবন্তিকার সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়,'' আমায় ছুঁয়ে দেখো অবন্তিকা! আমি সত্যি সত্যি আছি! কোথায় যাবো আমি তোমায় ছাড়া!''
অবন্তিকার চোখ থেকে নেমে আসে থই থই জল! ''তোমাকে সত্যি ভেবে এর আগে বহুবার তোমাকে আমি ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছো! তারপর আমি অনেক কেঁদেছি, অনেক, অনেক! কষ্টে গলা ধরে এসেছে! মনে হয়েছে বুকের মাঝে হৃদপিন্ড কে যেন শক্ত করে খামচে ধরেছে! আমি শ্বাস নিতে পারি নি! তারপর নিজেকে আবিস্কার করেছি হাসপাতালের বেডে! এমন আমার সাথে বহুবার হয়েছে জানো! তুমি আছো ভেবে তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে কষ্টের সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়েছি! মারা যেতে বসেছি কয়েকবার! তারপর অনেক কষ্টে বাবা আর ডাক্তার আংকেল মিলে আমাকে সুস্থ করে তুলেছেন! তাই আমি আর তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে যাবো না। কোন দিন না! ''
''কি বলছো এ সব বোকা মেয়ে! একা একা থাকতে থাকতে তোমার মাথাটাই গেছে!'' অনিন্দ্যের মুখে বিরক্তির ছাপ!
''কে বলেছে আমি একা থাকি? আমার সাথে তো সব সময়ই তুমি আছো! আমার চিন্তা, ভাবনা, ধ্যান , জ্ঞান সবখানেই তো তুমি! আমি বহুবার চেয়েছি তোমায় ভুলে একলা হতে! কিন্তু পারি নি! তোমার ভাবনারা ছায়ার মত পিছু নিয়ে হয়ে থেকেছে ছায়াসঙ্গী! আমি ঘুমালে মনে হয় গালে এসে পড়ে তোমার গরম নিশ্বাস, আমি চমকে জেগে উঠি! জোর করে বইয়ের পাতায় মুখগুজতে গেলে দেখি অক্ষরে অক্ষরে তোমার পাঠানো ইনবক্সের রোম্যান্টিক সব মেসেজ! আমি বই ছুড়ে ফেলে দেই! কোকিলের কুহু কুহুতে মনে হয় তুমি বুঝি দুষ্টুমী করে ওভাবে ডাকছো! আমি নিজের অজান্তেই হেসে ফেলি! এমন কি বিকেলের মৃদু রোদেও মনে হয় তুমি জড়িয়ে আছো, নিজের ছায়াকে তুমি ভেবে চমকে উঠি! বলো কি করে হবো আমি একা? আমারও যে বহুদিনের একলা হবার সাধ! এমন একটি ভোরের খুব প্রত্যাশা যেই ভোরে তুমি আর থাকবে না আমার ভাবনায়, চিন্তা-চেতনায়, ভালোবাসার দূর্বার আকাঙ্ক্ষায়!''
''আর তাই বুঝি ভার্সিটি ছেড়ে একে বারে চলে এসেছো?'' অনিন্দ্য অবন্তিকার কথা কেঁড়ে নেয়। ''আর একটিবারের জন্যও ফিরে আসো নি!''
''হুম!'' অবন্তিকার দীর্ঘশ্বাস! ''তুমি যখন আমাকে ফেলে তোমার মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করলে আমি তখন মনে মনে পাড় ভাঙা নদীর নরম পলির মত ধসে যাই! মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মত হয়ে পড়ি নিঃসঙ্গ! আর তাছাড়া চারপাশের প্রকৃতিও বার বার তোমাকে মনে করিয়ে দেবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল! ক্লাস, করিডোর, বেলকনি, বাগান অথবা আমাদের ভার্সিটির বিশাল ক্যাম্পাস সব তোমার স্মৃতিগুলোকে জড়ো করে মেলে ধরতো আমার সামনে! সবখানেই যেন তোমার আমার একসাথে পথচলার অস্তিত্ব মেশানো! হোক না সে্টা মাত্র বছর দুয়েকের! তবুও ভালোবাসা মনে হত বহু পুরনো। ঠিক যেন আমার আমিত্বকে জুড়ে তোমার তুমি! তুমি ছাড়া আমি নিতান্তই অসম্পূর্ণ! এক অপূর্ণ মানবী!''
''তুমি এত ভালোবাসো আমায়! অথচ তোমার মন পেতে আমার সে কি ভোগান্তি!'' অনিন্দ্য হেসে গড়িয়ে পড়ে। '' বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি ব্যাচেলর স্যার আর তুমি ছাত্রী! তোমাকে আমার জাস্ট বারবিডল মনে হত অবন্তিকা! হয়ত তুমি আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট আর দেখতে টুকটুকে টমেটোর মত ছিলে তাই! তোমার সাথে প্রেম প্রেম খেলতে ভালো লাগতো! তোমার রাগ, অভিমান, খুনসুটি, তারপর অবশেষে বেলা পড়ে এলে সব ভুলে দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়া! সবই খুব অনুভব করতাম আমি জানো।''
''তবে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে অনিন্দ্য?'' ফুপিয়ে ওঠে অবন্তিকা! ''জানো তুমি চলে যাবার পর ক্লাসের বখাটে ছেলেগুলো আমাকে অনেক ক্ষেপিয়েছে! মনে আছে একবার আমাকে বিরক্ত করার জন্য তুমি তাদের বোকে ছিলে? ওরা কড়ায় গন্ডায় তার প্রতিশোধ নিয়েছে আমার উপর! আমি ওদের ভয়েও আর ক্লাসে ফিরে যাই নি! আগে তো আমার সাথে ছিলে তুমি! কেউ আমার দিকে আঙ্গুল তুলে তাকালে তুমি এসে সামনে দাড়িয়েছো! তুমি চলে যাবার পর তাই বড় অসহায় মনে হয়েছে নিজেকে! বড় নিঃস্ব চারপাশ! সব কিছু!''
''এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন?'' আদুরে সুরে বলে অনিন্দ্য!'' দৌড়ে এসে সেই আগেকার দিনের মত আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ো! আমি তোমাকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখাবো! সব কষ্ট ভুলে যাবে তুমি!''
মাথা নাড়ে অবন্তিকা ,''না! তুমি বাস্তবে নেই! তুমি ভ্রম! তুমি আমার হ্যালুসিনেশান! ডাক্তার আংকেল বলেছেন নিয়মিত ওষুধ খেলেই তুমি পালিয়ে যাবে! তুমি বলে এখন আর কেউ নেই। তুমি শুধু আমার কল্পনা!''
অনিন্দ্য সামনে দু হাত বাড়িয়ে দেয়,'' কে বলেছে আমি কল্পনা! আর ডাক্তার আংকেল বললেই হল নাকি! তুমিও বুঝি খুব শুনেছো তার কথা? আমি জানি তুমি কোন ওষুধ খাও নি! কারণ তুমি চাও না আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যাই।''
''হুম আমি কোন ওষুধ খাইনি!'' অনুরাগ ঝোরে পড়ে অবন্তিকার কন্ঠে! ''আমি অসুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে রাজী আছি, তবু তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত বাঁচতে রাজী নই! ''
''তাহলে আমার কাছে আসতে এত কেন ভাবছো?'' ভ্রু কুচকে তাকায় অনিন্দ্য!
'' কারণ তোমার স্ত্রী!''অভিযোগের সুর অবন্তিকার কন্ঠে! '' সে এখনো বর্তমান তোমার সাথে! আর আছে তোমার আর আমার মাঝের এই বিশাল গহ্বর! তুমি আছো এক ছাঁদে আর আমি অন্য! আমি তোমার কাছে আসতে গেলে নিচে পড়ে মারা পড়ব.....!''
অনিন্দ্য দু হাত আরো প্রসারিত করে ছাদের কিনারে এসে দাঁড়ায়,''ওহ এই কথা! আমি ঐ মহিলাকে সেই কবে ছেড়ে দিয়েছি!... তুমি নিশ্চিন্তে আমার কাছে আসতে পা্রো! আর তুমি একদম ভেবো না! তুমি পড়ে যেতে নিলে আমি খপ করে তোমার হাত ধরে ফেলবো! মনে আছে একবার বর্ষায় দুজনে এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে তুমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলে আর আমি তোমাকে শক্ত করে ধরে ফেলেছিলাম? ঠিক সে রকম!''
অবন্তিকা দৌড়ে ছুটে অনিন্দ্যের বুকে! হয়ত তার ভালোবাসা হয় পূর্ণ!
পরদিন ভোরে রাস্তার উপর মেলে অবন্তিকার লাশ!
১৬ মে - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪